মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

দায়িত্ব পালনে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন নতুন নিয়োগ পাওয়া শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার (৬২৮৪)। তিনি ইতোপূর্বে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পরিচালক-প্রশাসন, (সিনিয়র যুগ্ম সচিব) ছিলেন। বরিশাল গৌরনদী উপজেলার বিল্লো গ্রামের মরহুম মৌলভী আবদুল কাদের তালুকদার এবং মরহুমা নজিবুন্নেছা’র পুত্র মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার ঝিনাইদহ ক্যাডেট কলেজ থেকে কৃতিত্বের সাথে এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করেন। পরে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

১৯৯৪ সালে অনুষ্ঠিত ১৫ তম বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে দেশের বুনিয়াদি ও সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ক্যাডার হিসাবে পরিচিত বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের গর্বিত সদস্য হন। ১৯৯৫ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি চাকুরীতে যোগদান করেন। চাকুরী জীবনে মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার কুষ্টিয়া সদর উপজেলা ও যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলার ইউএনও, ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ঝিনাইদহ ও নোয়াখালীর জেলা প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যুগ্মসচিব হিসাবে পদোন্নতি পাওয়ার পর তিনি সর্বশেষ দুর্যোগ ও ত্রান মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক (প্রশাসন) হিসাবে অদ্যাবধি দায়িত্ব পালন করছেন সফলতার সাথে। সম্প্রতি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার’কে বরিশাল বিভাগের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার হিসাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় হতে বদলী করা হয়। সে বদলী আদেশ বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার’কে ২ সেপ্টেম্বর শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার হিসাবে নিয়োগ প্রদান করেন। সিনিয়র যুগ্মসচিব মোঃ মাহবুব আলম তালুকদারের পরিবারে রয়েছে ৪ ভাই, ৪ বোন। ১৯৯৯ সালে মাহবুব আলম তালুকদার উর্মিলা আক্তারের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী উর্মিলা আক্তার একজন গৃহিণী। মাহবুব-উর্মিলা দম্পতি মারশিদ ও মেহরাব নামক দুই পুত্র সন্তানের গর্বিত জনক ও জননী। জনপ্রশাসনের একজন সৎ, দক্ষ ও পেশাদার কর্মকর্তা হিসাবে মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার প্রশাসনের সবার কাছে সুপরিচিত। চাকুরী জীবনের বিভিন্ন সময়ে চ্যালেন্ঞ্জিং বিষয়গুলো তিনি পার করেছেন, নিজের দূরদর্শিতা, বিচক্ষণতা ও পেশাদারিত্ব দিয়ে। মেধাবী এই কর্মকর্তা বিদেশ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। প্রশাসন ব্যাবস্থাপনা বিষয়ে একাধিক দেশ থেকে চৌকস ও মেধাবী কর্মকর্তা মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন।
অপরদিকে, ভিন্ন প্রজ্ঞাপনে একইদিন ওএসডি হয়ে বদলী হওয়া বিদায়ী আরআরআরসি মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন কৃতিত্বের সাথে। মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) ১৯৯১ সালে বিসিএস (প্রশাসন) এ যোগ দেন। তিনি যুগ্মসচিব থাকাবস্থায় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে কক্সবাজারে শরনার্থী ত্রান ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) হিসাবে নিয়োগ পান। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট হতে পরবর্তী সময়ে মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে আসা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা শরনার্থীদের অপ্রতুল জনবল নিয়ে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা করে তিনি ও তাঁর প্রশংসিত হন। এক বছর আগে আরআরআরসি আবুল কালাম এনডিসি সরকারের অতিরিক্ত সচিব হিসাবে পদোন্নতি পান। অত্যন্ত অমায়িক, স্বজ্জন ও সদালাপী হিসাবে তিনি সবার কাছে সুপরিচিত ছিলেন। বিগত সালের নভেম্বর ও চলতি সালের ২২ আগস্ট পূর্ব নির্ধারিত মিয়ানমারে রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনে ব্যর্থতা, ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা শরনার্থী আগমনের ২ বছর পূর্তি উপলক্ষে রোহিঙ্গা শরনার্থী মহাসমাবেশ করার বিষয়ে তিনি ও তার প্রশাসন তমুল বিতর্কের মধ্যে পড়ে। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সম্মুখীন হন খোদ সরকার। এ অবস্থায় আরআরআরসি মোহাম্মদ আবুল কালাম এনডিসি (অতিরিক্ত সচিব) সহ ৭ জন রোহিঙ্গা প্রশাসনের কর্মকর্তা’কে বদলি করা হয়।
এদিকে, রোহিঙ্গা শরনার্থী প্রত্যাবাসনে জটিলতা, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সন্ত্রাসী ও অপরাধ কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়া, রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কর্মরত এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর লাগামহীন কর্মকার্ন্ড, দীর্ঘদিন রোহিঙ্গা শরনার্থী ক্যাম্পে কর্মরত থাকা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার আদায়ের জন্য গঠিত বিভিন্ন রোহিঙ্গা সংগঠনের অপতৎপরতা বৃদ্ধি সহ বহুবিদ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে নতুন নিয়োগ পাওয়া আরআরআরসি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার ও তাঁর প্রশাসনকে। সমাধানের পথ খুঁজতে হবে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সাথে এনজিও এবং আইএনজিও গুলোর দ্বন্দ্ব, রোহিঙ্গা শরনার্থীদের সাথে সাংঘর্ষিক অবস্থান সহ দীর্ঘদিন জিইয়ে থাকা অনেক জটিল সমস্যার। এবিষয়ে নতুন নিয়োগ পাওয়া আরআরআরসি মোঃ মাহবুব আলম তালুকদার সিবিএন-কে বলেন-রাষ্ট্রীয় ভাবে দায়িত্ব যখন দেওয়া হয়েছে, কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং হলেও রাষ্ট্রের স্বার্থে সে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতার সাথে সেগুলো সমাধান করতে হবে। এজন্য তিনি কক্সবাজার জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, বিজিবি, এনজিও, আইএনজিও, স্থানীয় জনগোষ্ঠী সহ সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করে বলেন, সবাই দেশপ্রেম নিয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থের কথা চিন্তা করলে সহজেই এসব সমস্যার সমাধান করা যাবে ইনশাল্লাহ।